বনরাজ্যে এরা অসহায়!







বুধবার | ৩ জুলাই ২০১৩ |
বনরাজ্যে এরা অসহায়!
 

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) :লাউয়াছড়া রিজার্ভ ফরেস্টে ফনা তোলা সাপ সমকাল
ম কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
দেশের বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য ও প্রাকৃতিক বনরাজ্য মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে বেরিয়ে বছরে এক হাজার ৫০০ সাপ মারা যায় শুধু গাড়িচাপায়। এদের অধিকাংশই বিলুপ্ত প্রজাতির। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় হারিয়ে যাবে দেশের ঐতিহ্যবাহী লাউয়াছড়া বনের বিরল প্রজাতিসহ ৩২ প্রজাতির সাপ। সম্প্রতি পরিচালিত সাপ গবেষণার এক জরিপে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে। জরিপে দেখা গেছে, প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের লাউয়াছড়া অংশে ৪-৫টি মৃত সাপ দেখতে পাওয়া যায়। এ হিসাবে মাসে গড়ে ১২০ থেকে ১৫০টি বিভিন্ন প্রজাতির সাপের অকাল মৃত্যু ঘটে। এ হিসাব অনুযায়ী বছরে দুর্ঘটনায় মৃত সাপের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫শ'র কাছাকাছি।
সম্প্রতি লাউয়াছড়ায় সাপ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করে সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন তরুণ সাপ গবেষক শাহরিয়ার সিজার মাহমুদ। তিনি জানান, এ পর্যন্ত তার দেখা ৩৫ প্রজাতির মধ্যে ১৪ প্রজাতির সাপই তিনি গাড়িচাপায় মৃত অবস্থায় শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিদিন লাউয়াছড়ায় গাড়িচাপায় ও বনদস্যুদের হাতে ৫-৬টি করে সাপ মারা যাচ্ছে। হিসাব করে দেখা গেছে, বছর শেষে এ সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সিজারের গবেষণায় শনাক্তকৃত বাংলাদেশে প্রথম আবিষ্কৃৃত বেন্ডেড টিংকেট ও ইরিডিসেন্ট সাপ দুটিও মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। বাংলাদেশে প্রথম আবিষ্কৃৃত এ সাপ দুটির একটি পাওয়া যায় লাউয়াছড়ার পার্শ্ববর্তী বন জানকীছড়ায় এবং অন্যটি পাওয়া যায় লাউয়াছড়ার প্রবেশ পথের কাছাকাছি শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কে স্পিডব্রেকারের পাশে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় লাউয়াছড়ার সাপগুলো হারিয়ে যাবে। ফলে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে আমাদের পরিবেশ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ হিসেবে গবেষকরা বলেছেন, লাউয়াছড়ার পাকা রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী প্রত্যেকটি যানবাহন সর্তক হয়ে চালাতে হবে। কোনো অবস্থায় লাউয়াছড়ার ভেতরে ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটারের বেশি বেগে গাড়ি চালাতে দেওয়া উচিত নয়। এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় বন সংরক্ষক (বন্যপ্রাণী) মাহাবুর রহমান জানান, এটা রোধ করা কঠিন। লাউয়াছড়ায় সাইনবোর্ড দিয়ে গাড়ি ধীরে চালানোর জন্য ইতিমধ্যে সর্তকবাণী দেওয়া হয়েছে।
তবে বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তায় এ রাস্তার পরিবর্তন করে লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ককে যানবাহনের আওতামুক্ত রাখাই সর্বোত্তম। এ ব্যাপারে লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মর্তুজা আলী জানান, এ সড়কের যানবাহনগুলো আস্তে আস্তে চললে বনের জীবজন্তু নিরাপদ থাকবে। শ্রীমঙ্গলের বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সীতেশ রঞ্জন দেব জানান, শক্ত আইন হলে তা রোধ করা সম্ভব। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে যেভাবে হাইকোর্ট জোরাল ভূমিকা রেখে থাকেন, এ ক্ষেত্রেও পশুপাখি, জীবজন্তু ও সরীসৃপ রক্ষায় তাদের এগিয়ে আসা উচিত।

No comments: