কোথাও থামতে হয় যাযাবরদেরও!
আশরাফুল ইসলাম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
যুগের পরিবর্তনের সাথে পাল্টে যায় অনেক কিছুই। পাল্টে যায় মানুষের জীবনচর্চার ধরন-ধারণ, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি, সামাজিক রীতিনীতি, বংশপরম্পরার পেশা-- এমন অনেক কিছুই । জীবনধারণের নিত্যদিনকার চাহিদা, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রতিকূলতায় হার মেনে ঐতিহ্যগত জীবনচর্চার আমূল পরিবর্তন এখন বিরল কোনো ঘটনা নয়; বরং দেশে দেশে মানব সভ্যতার বিবর্তনের এমন দৃশ্যপটকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখেন নৃ-বিজ্ঞানীরা।
মানবসভ্যতার ব্যাপক উৎকর্ষের যুগেও বাংলাদেশে কিছু ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর দেখা মেলে, যাঁরা এখনো ঘোচাতে পারেনি আদিম জীবনচর্চার অনেক অভ্যাস। সাপুড়ে বা বেদে সম্প্রদায় এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এরা মূলত নদী-খাল-বিলে নৌকায় ভাসমানভাবে বা স্থলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রাম্যমাণ-যাযাবর জীবন যাপনে অভ্যস্ত। বৈচিত্র্যময় ও ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাপনের এমন রীতি তাদের পূর্বসূরিদের থেকেই প্রাপ্ত। পূর্বসূরিদের প্রতি অমোঘ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ঐতিহ্যগত এ জীবনচর্চায় পরিবর্তন আনতে খুব কমই চিন্তা করে নৃ-তাত্ত্বিক এ জনগোষ্ঠী।
মানবসভ্যতার ব্যাপক উৎকর্ষের যুগেও বাংলাদেশে কিছু ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর দেখা মেলে, যাঁরা এখনো ঘোচাতে পারেনি আদিম জীবনচর্চার অনেক অভ্যাস। সাপুড়ে বা বেদে সম্প্রদায় এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এরা মূলত নদী-খাল-বিলে নৌকায় ভাসমানভাবে বা স্থলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রাম্যমাণ-যাযাবর জীবন যাপনে অভ্যস্ত। বৈচিত্র্যময় ও ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাপনের এমন রীতি তাদের পূর্বসূরিদের থেকেই প্রাপ্ত। পূর্বসূরিদের প্রতি অমোঘ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ঐতিহ্যগত এ জীবনচর্চায় পরিবর্তন আনতে খুব কমই চিন্তা করে নৃ-তাত্ত্বিক এ জনগোষ্ঠী।
কিন্তু যুগের পরিবর্তনের সাথে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার কাছে পরাজয় বরণ করে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে যাযাবর সাপুড়ে জনগোষ্ঠীও সুশৃঙ্খল ও স্থায়ী জীবনযাপনের চেষ্টা করছে। নৃ-তাত্ত্বিক এ জনগোষ্ঠীর পরিবর্তিত জীবনযাপনের এমন দৃশ্যের দেখা মিলবে গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার পূবাইল ইউনিয়নের খোরাইদ গ্রামের বাইনান্দিরটেক নামক স্থানে। এখানেই প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করছে দেড় হাজারেরও বেশি সাপুড়ে জনগোষ্ঠী।
আজীবন ন্যূনতম মৌলিক চাহিদার সংস্থানে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ানো বাইনান্দিরটেকের সাপুড়েরা নদীতে ভাসমান বসবাস ত্যাগ করে সমতলে স্থায়ী আবাস গড়েও সেই কাঙ্ক্ষিত মৌলিক চাহিদার দেখা পাচ্ছেন না। তাদের প্রতি সমাজের বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সামাজিক সুবিধার অনুপস্থিতি এই জনগোষ্ঠীকে ফেলেছে চরম হতাশা আর অনিশ্চয়তার মাঝে।
সাপুড়ে পল্লীর সর্দার আলাউদ্দিন ভান্ডারীর (৬০) সাথে কথা বলে জানা যায় এ জনগোষ্ঠীর দুর্দশাগ্রস্ত জীবনের নানা কথা। বাইনান্দিরটেকের সাপুড়েদের পূর্বসূরিরা মুন্সিগঞ্জের মুন্সিরহাটে পদ্মার তীরে নৌকায় ভাসমান জীবনযাপন করত। মুন্সিরহাট থেকে পাড়ি জমিয়ে একসময় তারা আস্তানা গাড়ে টংগীর তুরাগের তীরে। এখানেই কয়েক যুগ পার করে দেয় তারা। প্রতিনিয়ত জীবনসংগ্রামে ক্লান্ত সাপুড়ে সর্দাররা একসময় নতুন ভাবে বাঁচবার কথা ভাবতে শুরু করেন। চরম কৃচ্ছতা সাধনের মাঝেও অল্প অল্প করে জমানো টাকায় মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে এক টুকরো জমি কেনার চেষ্টা করে। সাপুড়েদের মাঝে যারা একটু সচ্ছল তারাই জমি কেনার ইচ্ছা পোষণ করে। অনেক খোঁজাখুজির পর ১৯৯৩ সালের দিকে গাজীপুর সদরের পূবাইল ইউনিয়নের ঝোঁপঝাড়ে ঘেরা দুর্গম গ্রাম খোরাইদের বাইনান্দিরটেকে এসে মিলে তাদের সেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। প্রথমে দু-এক জন সাপুড়ে ১০/১২ হাজার টাকা গন্ডায় কয়েক শতাংশ জমি ক্রয় করে সামান্য ‘ডেরা’ (লতাপাতা দিয়ে তৈরি ক্ষুদ্রাকৃতির অস্থায়ী ঘর) স্থাপন করে সাপুড়ে পল্লীর গোড়াপত্তন করেন। পর্যায়ক্রমে এখানে সাপুড়েদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধ করেও যারা কিছু সঞ্চয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন এমন সাপুড়েদের আরো অনেকে খণ্ড খনণ্ড জমি কিনে গড়ে তুলেন তাদের ‘ডেরা’। দু’এক ঘর করে বাইনান্দিরটেকে সাপুড়েদের বহর শ’ ছাড়িয়ে হাজারে পৌঁছে। বসতি স্থাপনের প্রায় দেড় যুগে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দেড় হাজারে।
দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা এ সম্প্রদায়ের মানুষদের মাঝে রয়েছে পারস্পারিক পরম সৌহার্দ্যবোধ। তাই যাদের বাইনান্দিরটেকে জমি কেনার ভাগ্য হয়নি এমন বহু সাঁপুড়েও বাস করছেন স্বগোত্রীয় আরেক জনের কেনা জমিতে ছোট ঘর তৈরি করে। আজীবন নানা অভাবের সাথে লড়াই করে শেষ সময়ে এসে সাপুড়ে সর্দারারা একটু স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন-যাপনের স্বপ্ন দেখলেও এখনো তা রয়ে গেছে স্বপ্নেই। বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক চড়া দাম, অপরদিকে রোজগারের উৎস সাপখেলা দেখানো, সাপের কামড়ের বিষ খোলা, বসতবাড়ি থেকে সাপ উদ্ধার করা কিংবা তাবিজ-কবচ সেবাতেও এখন আর মানুষজন বেশি উৎসাহী নন। এমন বাস্তবতায় ছেলে-সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে উঠেছে বাইনান্দিরটেকের সাপুড়েদের জন্য। রাষ্ট্রীয় নাগরিক সুযোগ-সুবিধার সিংহভাগই অনুপস্থিত এখানে।
আজীবন ন্যূনতম মৌলিক চাহিদার সংস্থানে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ানো বাইনান্দিরটেকের সাপুড়েরা নদীতে ভাসমান বসবাস ত্যাগ করে সমতলে স্থায়ী আবাস গড়েও সেই কাঙ্ক্ষিত মৌলিক চাহিদার দেখা পাচ্ছেন না। তাদের প্রতি সমাজের বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সামাজিক সুবিধার অনুপস্থিতি এই জনগোষ্ঠীকে ফেলেছে চরম হতাশা আর অনিশ্চয়তার মাঝে।
সাপুড়ে পল্লীর সর্দার আলাউদ্দিন ভান্ডারীর (৬০) সাথে কথা বলে জানা যায় এ জনগোষ্ঠীর দুর্দশাগ্রস্ত জীবনের নানা কথা। বাইনান্দিরটেকের সাপুড়েদের পূর্বসূরিরা মুন্সিগঞ্জের মুন্সিরহাটে পদ্মার তীরে নৌকায় ভাসমান জীবনযাপন করত। মুন্সিরহাট থেকে পাড়ি জমিয়ে একসময় তারা আস্তানা গাড়ে টংগীর তুরাগের তীরে। এখানেই কয়েক যুগ পার করে দেয় তারা। প্রতিনিয়ত জীবনসংগ্রামে ক্লান্ত সাপুড়ে সর্দাররা একসময় নতুন ভাবে বাঁচবার কথা ভাবতে শুরু করেন। চরম কৃচ্ছতা সাধনের মাঝেও অল্প অল্প করে জমানো টাকায় মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে এক টুকরো জমি কেনার চেষ্টা করে। সাপুড়েদের মাঝে যারা একটু সচ্ছল তারাই জমি কেনার ইচ্ছা পোষণ করে। অনেক খোঁজাখুজির পর ১৯৯৩ সালের দিকে গাজীপুর সদরের পূবাইল ইউনিয়নের ঝোঁপঝাড়ে ঘেরা দুর্গম গ্রাম খোরাইদের বাইনান্দিরটেকে এসে মিলে তাদের সেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। প্রথমে দু-এক জন সাপুড়ে ১০/১২ হাজার টাকা গন্ডায় কয়েক শতাংশ জমি ক্রয় করে সামান্য ‘ডেরা’ (লতাপাতা দিয়ে তৈরি ক্ষুদ্রাকৃতির অস্থায়ী ঘর) স্থাপন করে সাপুড়ে পল্লীর গোড়াপত্তন করেন। পর্যায়ক্রমে এখানে সাপুড়েদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধ করেও যারা কিছু সঞ্চয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন এমন সাপুড়েদের আরো অনেকে খণ্ড খনণ্ড জমি কিনে গড়ে তুলেন তাদের ‘ডেরা’। দু’এক ঘর করে বাইনান্দিরটেকে সাপুড়েদের বহর শ’ ছাড়িয়ে হাজারে পৌঁছে। বসতি স্থাপনের প্রায় দেড় যুগে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দেড় হাজারে।
দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা এ সম্প্রদায়ের মানুষদের মাঝে রয়েছে পারস্পারিক পরম সৌহার্দ্যবোধ। তাই যাদের বাইনান্দিরটেকে জমি কেনার ভাগ্য হয়নি এমন বহু সাঁপুড়েও বাস করছেন স্বগোত্রীয় আরেক জনের কেনা জমিতে ছোট ঘর তৈরি করে। আজীবন নানা অভাবের সাথে লড়াই করে শেষ সময়ে এসে সাপুড়ে সর্দারারা একটু স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন-যাপনের স্বপ্ন দেখলেও এখনো তা রয়ে গেছে স্বপ্নেই। বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক চড়া দাম, অপরদিকে রোজগারের উৎস সাপখেলা দেখানো, সাপের কামড়ের বিষ খোলা, বসতবাড়ি থেকে সাপ উদ্ধার করা কিংবা তাবিজ-কবচ সেবাতেও এখন আর মানুষজন বেশি উৎসাহী নন। এমন বাস্তবতায় ছেলে-সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে উঠেছে বাইনান্দিরটেকের সাপুড়েদের জন্য। রাষ্ট্রীয় নাগরিক সুযোগ-সুবিধার সিংহভাগই অনুপস্থিত এখানে।
সাপুড়েরা জানান, এ পল্লীতে ৩৯০ জন ভোটার রয়েছেন। স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের আগে তাদের কদর বেড়ে যায়। সে সময় প্রার্থীরা ঘন ঘন যাতায়ত করেন, সুখ-দু:খের খবর নেন। তবে নির্বাচনের পড়ে ভুলেও কেউ এ পথ মাড়ান না বলে অভিযোগ সাঁপুড়েদের। সাপের খেলা দেখানো কিংবা সাপ ধরার কাজ করলেও এখানকার সাপুড়েরা সবাই ইসলাম ধর্মাবলম্বী। নিজেদের প্রচেষ্টায় এখানে তারা একটি মসজিদও নির্মাণ করেছেন। সামাজিকভাবে বসবাস করার সব ধরনের সদিচ্ছা রয়েছে সাপুড়েদের। তার পরও দারিদ্র্যের কাছে বার বার হার মানা।
এখানকার সাপুড়ে পরিবারের বহু শিশু-কিশোরদের দেখা মিলবে পল্লীতে, যারা দারূণভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে । অপুষ্টিতে আছে শিশুদের মা-বাবারাও। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা থাকলেও এখানে গড়ে উঠেনি কোনো সরকারি স্কুল। এনজিও পরিচালিত একটি শিশুস্কুল থাকলেও চড়া বেতনের কারণে অনেকে পারছেন না সেই স্কুলে পড়াতে। সাপুড়েপল্লীর আবদুল মালেকের স্ত্রী জাহিরূন নেছা (৫০) আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাগোর বাচ্চা পুলাপান স্কুলে গেলে অন্য পুলারা (শিক্ষার্থী) সাপুইড়ার সন্তান বইলা তাগোর লগে খারাপ ব্যবহার করে। ঘিন্নার চোহে দ্যাহে। আমাগোরও ইচ্ছা নিজেগর বাচ্চারা পড়ালেখা শিখুক-বড় অউক।’
বাইনান্দিরটেকের সাপুড়েপল্লীর বেশির ভাগই এখনো উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ঐতিহ্যের পেশা ছাড়েননি। এখানকার বাসিন্দাদের সিংহভাগই সাপের খেলা দেখানো, ওঝার কাজ করা, তাবিজ-কবচ দেয়া, বসতবাড়ি থেকে সাপ উদ্ধার করা, বেজির খেলা দেখানো ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু আধুনিক যুগের মানুষজন এসবের প্রতি খুব বেশি আকৃষ্ট না হওয়ায় সাপুড়েদের রোজগারও নেমে গেছে অনেক নিচে। অথচ প্রয়োজনীয় সব দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি সাপুড়েদের ক্রমেই ভাবিয়ে তুলছে। কেউ কেউ বিকল্প পেশার সন্ধানেও ছুটছেন।
ইতিহাসবিদ, গবেষক ও গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক ড. ফরিদ আহমেদ জানান, ‘প্রায় সব নাগরিক সুবিধাই এখানে অনপুস্থিত। এ জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ না হলে তাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম অন্ধকার পথে ধাবিত হবে। তাই রাষ্ট্রের উচিত নাগরিক হিসেবে সাপুড়েদের সকল মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করা
এখানকার সাপুড়ে পরিবারের বহু শিশু-কিশোরদের দেখা মিলবে পল্লীতে, যারা দারূণভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে । অপুষ্টিতে আছে শিশুদের মা-বাবারাও। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা থাকলেও এখানে গড়ে উঠেনি কোনো সরকারি স্কুল। এনজিও পরিচালিত একটি শিশুস্কুল থাকলেও চড়া বেতনের কারণে অনেকে পারছেন না সেই স্কুলে পড়াতে। সাপুড়েপল্লীর আবদুল মালেকের স্ত্রী জাহিরূন নেছা (৫০) আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাগোর বাচ্চা পুলাপান স্কুলে গেলে অন্য পুলারা (শিক্ষার্থী) সাপুইড়ার সন্তান বইলা তাগোর লগে খারাপ ব্যবহার করে। ঘিন্নার চোহে দ্যাহে। আমাগোরও ইচ্ছা নিজেগর বাচ্চারা পড়ালেখা শিখুক-বড় অউক।’
বাইনান্দিরটেকের সাপুড়েপল্লীর বেশির ভাগই এখনো উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ঐতিহ্যের পেশা ছাড়েননি। এখানকার বাসিন্দাদের সিংহভাগই সাপের খেলা দেখানো, ওঝার কাজ করা, তাবিজ-কবচ দেয়া, বসতবাড়ি থেকে সাপ উদ্ধার করা, বেজির খেলা দেখানো ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু আধুনিক যুগের মানুষজন এসবের প্রতি খুব বেশি আকৃষ্ট না হওয়ায় সাপুড়েদের রোজগারও নেমে গেছে অনেক নিচে। অথচ প্রয়োজনীয় সব দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি সাপুড়েদের ক্রমেই ভাবিয়ে তুলছে। কেউ কেউ বিকল্প পেশার সন্ধানেও ছুটছেন।
ইতিহাসবিদ, গবেষক ও গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক ড. ফরিদ আহমেদ জানান, ‘প্রায় সব নাগরিক সুবিধাই এখানে অনপুস্থিত। এ জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ না হলে তাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম অন্ধকার পথে ধাবিত হবে। তাই রাষ্ট্রের উচিত নাগরিক হিসেবে সাপুড়েদের সকল মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করা
সাপুড়েপল্লীর এমন মানবিক সংকট সহানুভূতির উদ্রেক করে স্থানীয় সচেতন নাগরিকদেরও। তাদের মতে, গাজীপুরের মতো শিল্পোন্নত জেলায় এদের পূনর্বাসিত করা কঠিন কিছু নয়। স্থানীয় দৈনিক জনসংবাদের সম্পাদক এম মাহফুজুল হক মনে করেন, ‘আধুনিক যুগে সব শ্রেণীর মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন হলেও সাপুড়ে সম্প্রদায়ের মতো কিছু ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর ভাগ্যের পরিবর্তন না হওয়া বৈষম্যের, যা মোটেও কাম্য নয়। ঐতিহ্যের পেশার পাশাপাশি তাদের সরকারিভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা গেলে এই সম্প্রদায় অনেকটা সাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে।