পশ্চিমবঙ্গে বেদে সম্প্রদায়ের জন্য আদর্শ গ্রাম গড়ে তোলার ঘোষণা

 


14 Sep 2011 01:40:52 AM Wednesday BdST


সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম


কলকাতা: বেদে সম্প্রদায়ের জন্য আর্দশ গ্রাম গড়ে তোলা হবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনায়।

মঙ্গলবার কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবেকানন্দ হলে প্রয়াগ সারপেন্ট্রি রিসার্চ অ্যান্ড কালচার ও লিটল ম্যাগাজিন ‘ঠেক’র এর উদ্যোগে এক আলোচনায় সভায় এই ঘোষণা দেওয়া হয়। যাযাবর বেদে সম্প্রদায় নিয়ে এরকম একটি গ্রাম বিশ্বে এই প্রথম।

বেদেদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা ও পুনর্বাসনের জন্য ‘বাংলার বেদিয়ারা, প্রান্তিক লোকবর্গ, লুপ্তপ্রায় লোকাচার’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় উপমহাদেশের বিশিষ্ট বেদিয়া গবেষক ড. রক্তিম দাশকে বেদে জনজাতির ওপর গবেষণার জন্য বিশেষ সম্মাননা দেন আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সর্প বিশারদ ডা. অমিয় কুমার হাটি।

এদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে গবেষণা পত্র পাঠ করেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শমিতা মান্না, লোক সংস্কৃতির গবেষক ননীগোপাল মালো, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ড. অচিন্ত্য বিশ্বাস।

অনুষ্ঠানে বিজ্ঞানী অমিয় কুমার হাটি বলেন, ‘রক্তিম দাশের লেখা বইটি ‘নৃতত্ত্বের আলোকে বেদিয়া জনজাতি’ আমাদের সামনে বেদে জনজাতিকে জানবার একটি প্রামাণ্য দলিল। এই বইটির জন্য তার রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পাওয়া উচিত। একজন সাংবাদিক হয়েও তিনি যেভাবে এই জনজাতিকে সংগঠিত করেছেন ও তাদের নিয়ে এই বইটি লিখেছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে।’

রক্তিম দাশ তার আলোচনায় বলেন, ‘বেদে জনজাতি বাংলাদেশ ও ভারতে ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হওয়ার দিকে এগুচ্ছে। কিছু মানুষ অবৈধ ভাবে মূল্যবান সাপের বিষ বিক্রি করছেন। সরকার যেন এই নিয়ম চালু করেন যে, তারাই শুধু বিষ বিক্রির অধিকারী হয়ে জীবনধারণ করতে পারেন।’

বেদেদের ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য সরকারি হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রয়াগ গ্রুপ যারা এই সারপেন্ট্রি রিসার্চ অ্যান্ড কালচার গঠন করেছেন, তারা এই কাজে এগিয়ে আসুন। বেদেদের নিয়ে একটি স্থায়ী প্রর্দশনশালা করুন। তাহলে দেশ-বিদেশের বহু মানুষ এসে এদের জীবিকা, সংস্কৃতি ও ভাষা সম্বন্ধে জানতে পারবে।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রয়াগ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অভীক বাগচী বলেন, ‘আমরা ওনার (রক্তিম দাশ) প্রস্তাব মেনে নিচ্ছি। সরকারি উদ্যোগে নয় বেসরকারি ভাবেই আমরা চন্দ্রকোনায় প্রয়াগের নবনির্মিত ফিল্মসিটিতে এর জন্য ৫০ একর জমি বরাদ্ধ করব। এইখানেই গড়ে উঠবে বেদেদের জন্য আর্দশ গ্রাম। এইভাবেই আমরা সবার সহযোগীতা নিয়ে আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন এই সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হব।’

আলোচনা সভার শেষে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বেদেরা তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রর্দশন করেন।
http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=61d43ba87e4489ad818a72f1abe4e28c&nttl=2011091401405257607&toppos=7

সারা বিশ্বে নজিরবিহীন ঘটনা : বেদে সম্প্রদায়ের জন্য হচ্ছে আদর্শ গ্রাম

দীপক রায় : অনেক ধরনের আদর্শ গ্রামের কথা শোনা গেছে। কিন্তু সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন যাযাবর জীবনযাপনে অভ্যস্ত বেদে সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য আদর্শ গ্রামের উদ্যোগ সম্ভবতঃ এই প্রথম। বহু বছর ধরেই বেদে সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করছেন রক্তিম দাস। একাধারে সাংবাদিক, বিজ্ঞানকর্মী, সমাজকর্মী, গবেষক, লেখক রক্তিম দাস সারা ভারত বেদিয়া ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদকও বটে। তাঁর ডাকে হাজার হাজার বেদিয়া সাপ নিয়ে ছুটে আসে রাজপথে। নিঃস্ব, নিরক্ষর, চালচুলোহীন বেদিয়াদের সামাজিক স্বীকৃতির জন্য বেদিয়া ফেডারেশনের অবদান এদেশে অনেক। দিনের পর দিন বেদিয়াদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে রক্তিম দাস একদিকে যেমন তাঁদের দাবিগুলো সরকার বাহাদুরের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছেন, পাশাপাশি বেদিয়াদের জীবনধারা, রীতিনীতি, লোকাচার, সংস্কার, পেশাগত দিকগুলোকে নথিবদ্ধ করেছেন ‘নৃতত্ত্বের আলোকে বেদিয়া জনজাতি’ নামক একটি অনন্য গ্রন্থে। গ্রন্থটি বাংলাদেশ ও ভারতের উভয় দেশের বেদিয়াদের নিয়েই লেখা। আবার বইটি প্রকাশিতও হয়েছে দুই দেশ থেকেই। সেই নিরিখে বাংলাদেশের বেদেদের নিয়েও রক্তিম দাসের সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে সংগঠন। আর তাঁর পাশে অভিভাবকের মতো আছেন বিশ্বসেরা জাদুকর পি সি সরকার।

সম্প্রতি, রক্তিম দাসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেদেদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা 'প্রয়াগ'। তারা বেদে সম্প্রদায়ের জন্য আর্দশ গ্রাম গড়ে তোলার জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলাতে নবনির্মিত ফিল্মসিটিতে এর জন্য ৫০ একর জমি বরাদ্ধ করেছেন। যা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই প্রসঙ্গে রক্তিম দাস জানান, ‘বেদে জনজাতি বাংলাদেশ ও ভারতে ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে। অথচ, কিছু মানুষ বেআইনিভাবে ভাবে বহুমূল্যবান সাপের বিষ বিক্রি করছেন। সরকার যদি এই নিয়ম চালু করে, বেদেরাই কেবলমাত্র বিষ বিক্রির অধিকারী হবে, তাহলে তারা ভালভাবে জীবনধারণ করতে পারে। বেদিয়া ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য সরকারি হস্তক্ষেপ খুবই দরকার। 'প্রয়াগ গ্রুপ' যারা এই সারপেন্ট্রি রিসার্চ অ্যান্ড কালচার গঠন করছেন, তারা এই কাজে এগিয়ে এসে বেদেদের নিয়ে একটি স্থায়ী প্রর্দশনশালা করছে। এতে দেশ-বিদেশের বহু মানুষ এসে বেদেদের জীবিকা, সংস্কৃতি ও ভাষা সম্বন্ধে জানতে পারবে। এইভাবেই সবার সহযোগীতা নিয়ে আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন এই সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হতে হবে।’

লেখকঃ দৈনিক আজকাল ও গণশক্তি'র নিয়মিত পত্রলেখক