সারা বিশ্বে নজিরবিহীন ঘটনা : বেদে সম্প্রদায়ের জন্য হচ্ছে আদর্শ গ্রাম

দীপক রায় : অনেক ধরনের আদর্শ গ্রামের কথা শোনা গেছে। কিন্তু সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন যাযাবর জীবনযাপনে অভ্যস্ত বেদে সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য আদর্শ গ্রামের উদ্যোগ সম্ভবতঃ এই প্রথম। বহু বছর ধরেই বেদে সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করছেন রক্তিম দাস। একাধারে সাংবাদিক, বিজ্ঞানকর্মী, সমাজকর্মী, গবেষক, লেখক রক্তিম দাস সারা ভারত বেদিয়া ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদকও বটে। তাঁর ডাকে হাজার হাজার বেদিয়া সাপ নিয়ে ছুটে আসে রাজপথে। নিঃস্ব, নিরক্ষর, চালচুলোহীন বেদিয়াদের সামাজিক স্বীকৃতির জন্য বেদিয়া ফেডারেশনের অবদান এদেশে অনেক। দিনের পর দিন বেদিয়াদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে রক্তিম দাস একদিকে যেমন তাঁদের দাবিগুলো সরকার বাহাদুরের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছেন, পাশাপাশি বেদিয়াদের জীবনধারা, রীতিনীতি, লোকাচার, সংস্কার, পেশাগত দিকগুলোকে নথিবদ্ধ করেছেন ‘নৃতত্ত্বের আলোকে বেদিয়া জনজাতি’ নামক একটি অনন্য গ্রন্থে। গ্রন্থটি বাংলাদেশ ও ভারতের উভয় দেশের বেদিয়াদের নিয়েই লেখা। আবার বইটি প্রকাশিতও হয়েছে দুই দেশ থেকেই। সেই নিরিখে বাংলাদেশের বেদেদের নিয়েও রক্তিম দাসের সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে সংগঠন। আর তাঁর পাশে অভিভাবকের মতো আছেন বিশ্বসেরা জাদুকর পি সি সরকার।

সম্প্রতি, রক্তিম দাসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেদেদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা 'প্রয়াগ'। তারা বেদে সম্প্রদায়ের জন্য আর্দশ গ্রাম গড়ে তোলার জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলাতে নবনির্মিত ফিল্মসিটিতে এর জন্য ৫০ একর জমি বরাদ্ধ করেছেন। যা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই প্রসঙ্গে রক্তিম দাস জানান, ‘বেদে জনজাতি বাংলাদেশ ও ভারতে ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে। অথচ, কিছু মানুষ বেআইনিভাবে ভাবে বহুমূল্যবান সাপের বিষ বিক্রি করছেন। সরকার যদি এই নিয়ম চালু করে, বেদেরাই কেবলমাত্র বিষ বিক্রির অধিকারী হবে, তাহলে তারা ভালভাবে জীবনধারণ করতে পারে। বেদিয়া ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য সরকারি হস্তক্ষেপ খুবই দরকার। 'প্রয়াগ গ্রুপ' যারা এই সারপেন্ট্রি রিসার্চ অ্যান্ড কালচার গঠন করছেন, তারা এই কাজে এগিয়ে এসে বেদেদের নিয়ে একটি স্থায়ী প্রর্দশনশালা করছে। এতে দেশ-বিদেশের বহু মানুষ এসে বেদেদের জীবিকা, সংস্কৃতি ও ভাষা সম্বন্ধে জানতে পারবে। এইভাবেই সবার সহযোগীতা নিয়ে আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন এই সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হতে হবে।’

লেখকঃ দৈনিক আজকাল ও গণশক্তি'র নিয়মিত পত্রলেখক
 

No comments: